মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোগীর পাশে থাকছে কুকুর, অবাধ বিচরণ গরুর

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০১ মে ২০২৪ | প্রিন্ট

রোগীর পাশে থাকছে কুকুর, অবাধ বিচরণ গরুর

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল কলেজ। তিনবার দেশসেরার খ্যাতি পেয়েছিল হাসপাতালটি। কিন্তু বর্তমানে ভেঙে পড়েছে সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের ভেতরে গরু ও কুকুরের দলের অবাধ বিচরণ দেখে মনে হবে, হাসপাতালে গরু, কুকুর ও মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে। হাসপাতালের সেবার মানের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক রোগী এবং তাদের স্বজনরা।

জানা যায়, এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার মানুষ ছাড়াও কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ এবং গাজীপুর থেকে রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকেন এখানে। এছাড়াও আউটডোরে চার থেকে সাড়ে চার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার রোগীর চাপ সামলিয়ে সেবার মান নিশ্চিত করে বিগত পরিচালনা প্রশাসনের নেতৃত্বে ২০১৮, ১৯ এবং ২০২০ সালে ‘হেলথ মিনিস্টারস’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে সম্প্রতি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ রোগী, তাদের স্বজন এবং নাগরিক সমাজের নেতারা।

সারেয়ার জাহান মুকুল নামে একজন ক্ষুব্ধ হয়ে তার ফেসবুক আইডিতে কুকুর-গরুর ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভেটেনারী হাসপাতাল (মমেকভেহা)।

সাইফুল ইসলাম তরফদার নামের একজন তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে লিখেছেন, হায়রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দৃশ্য।

রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে কুকুর শুয়ে আছে এমন দৃশ্য দেখলে যেকোরও মনে হবে যেন কুকুরের পাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে। গরুও রোগীর সঙ্গে হেঁটে হাসপাতালে ঢুকছে। এতে রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এছাড়া কয়েক বছর আগে নিয়মিত ওষুধ পাওয়া গেলেও এখন প্রকট সংকট দেখানো হচ্ছে। পরীক্ষা-নীরিক্ষাতেও মাঝেমধ্যে ভুল আসছে। আবার অনেক চিকিৎসক বাহিরে তাদের পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের। হাসপাতালের সেবার মানের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে শিশুকে নিয়ে ভর্তি হয়েছেন নুসরাজ জানান। তিনি বলেন, আমার মেয়ে শিশুর পেটের সমস্যাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। শিশুর হঠাৎ সমস্যা বেড়ে গেলে চিকিৎসককে ডাকা হয়, তবে তারা কাছে আসেন না। বার বার ডাকলে নার্সরাও দুর্ব্যবহার করেন।

গাইনি ওয়ার্ডে স্ত্রীকে ভর্তি করেছেন এডভোকেট মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পরিচালক নাসির উদ্দিনের সময়ে হাসপাতালে একটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন তার কিছুই নেই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে রোগীরা সেবা নিচ্ছেন। হাসপাতালে সব ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে কুকুর-গরুর অবাধ বিচরণ। ভেতরে অনেকগুলো গেট অতিক্রম করে কুকুর এবং গরু প্রবেশ করছে। তাহলে দারোয়ান রেখে লাভ কী? এসব দৃশ্য দেখে যে কেউ বুঝতে পারে, হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না।

জেলার হালুয়াঘাটের মোশারফ হোসেন হার্টের সমস্যা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন। শয্যা না পেয়ে বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পরপরই কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার সুযোগ পেলেও ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষার সময় বেঁধে দেওয়া হয় দুই মাস। বাধ্য হয়ে তিনি ইকোসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা বাইরে করান।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন খান বলেন, সেবার মান ভালো বলেই এক হাজার শয্যার হাসপাতালে তিনগুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কুকুর-গরু হাসপাতালে প্রবেশ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে কিনা জানা নেই।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো নজরে এসেছে। সিটি করপোরেশনে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার থেকে যে পরিমাণ ওষুধ আসে, সব ওষুধই আমরা রোগীদের দিয়ে দেই। এছাড়া খুব দ্রুত ইকো পরীক্ষার মেশিন বাড়ানো হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০১ মে ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]